বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ।
Last updated
Last updated
উনিশ শতকে বিভিন্ন সভা-সমিতির উন্মেষ
উনিশ শতকে সামাজিক অনাচার রোধে গড়ে উঠেছিলো একাধিক সভা যেমন 'তত্ত্ববোধিনী সভা’(দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দ ) , ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ (কালীপ্রসন্ন সিংহ,১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ), ‘সুরাপান নিবারণী সভা’ ((রাজনারায়ন বসু) । তেমনি স্বদেশ স্বজাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক সভা ও সমিতির উদ্ভব হয়েছিল । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন', ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে 'ভূম্যাধিকারী সমাজ' ও 'সাধারণ জ্ঞানোপর্জিকা সভা' ১৮৪৮ খ্রষ্টাব্দে 'বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দ 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।
অন্যদিকে বাংলাভাষার চর্চা ও বাংলা ভাষায় দেশ-বিদেশের গ্রন্থ অনুবাদের সঙ্গবদ্ধ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় । এই উদ্দেশ্যে একাধিক সভাসমিতি গঠিত হয়েছিল ।১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশীও বিদেশী ভাষায় বাংলা পাঠ্যপুস্তক প্রনয়নের জন্য ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ রামমোহন রায় ‘সর্বতত্ত্বদীপিকা সভা' প্রতিষ্ঠিত করেন ।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার প্রতিষ্ঠা ।
উপরিউক্ত সভাসমিতির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ ছিল 'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা স ভা'। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত বেন্টিঙ্কের পাশ্চাত্য ভাষা নীতির প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য প্রীতি ও প্রসার প্রচেষ্টায় উৎসাহ উদ্দীপনার মাত্রা কিছু বৃদ্ধি পায় । তারই সূত্র ধরে ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ স্থাপিত হয়েছিল ।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার প্রতিষ্ঠা ।
সম্ভবত ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরি ,প্রসন্ন কুমার ঠাকুর , সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয় পত্রিকার সম্পাদক হরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা প্রতিষ্ঠা করেন । এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি ছিলেন সংবাদ ভাস্কর পত্রিকার সম্পাদক গৌরিশংকর তর্কবাগীশ এবং প্রথম সম্পাদক ছিলেন পন্ডিত দূর্গাপ্রসাদ তর্ক পঞ্চানন । প্রথম দিকে বৃহঃস্পতিবার সভার অধিবেশন হতো পরে অবশ্য পরিবর্তিত হয় ।
বৈশিষ্টঃ ।
বাংলা ভাষা সাহিত্যের উৎকর্ষতা বিধানের জন্য এই সভা স্থাপিত হলেও পরবর্তীকালে দেশবাসীর স্বার্থবিরোধী সরকারী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা এই সভার অন্যতম নীতি হিসেবে গৃহীত হয়।১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ৮ই ডিসেম্বেরর সভায় রামলোচন সরকার নিষ্কর ভূমির ওপর কর স্থাপনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত কিনা সে সম্পর্কে আলোচনার প্রস্তাব করেন ।
সভায় ধর্ম সম্পর্কিত বিষয়ের আলোচনা নিয়ম বিরুদ্ধ ছিল। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ৮ই ডিসেম্বর সভায় সভাপতি গৌরীশংকর পূর্ব অধিবেশন স্থিরীকৃত বিষয় দুঃখ হইতে সুখ জন্মে কি সুখ হইতে দুঃখ জন্ম’ আলোচনার জন্য উত্থাপিত হলে রামলোচন ঘোষ অদৃষ্ট,ধর্ম প্রভৃতি প্রসঙ্গের আলোচনায় আপত্তি তোলেন এবং সভার দশম নিয়মের বিরোধী বলে উল্লেখ করেন।
ব্যার্থতা ও গুরুত্ব –
তবে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি । সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরোধিতার প্রশ্নে সভার সদস্যদের মধ্যে দলাদলি ও মতভেদ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল ।
যোগেশচন্দ্র বাগলের মতে ‘এটি ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন’। সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার ঈশ্বরগুপ্ত লেখেন “রাজকীয় বিষয় বিবেচনার জন্য অপর যে সভা হইয়াছিল তন্মধ্যে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভারকে প্রথম বলিতে হইবে”।
Please click the link below to watch video lecture.
এই বিষয়ের ওপর ভিডিও লেকচার দেখার জন্য নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ।