জমিদার সভা ।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার বিলুপ্তির পর বাঙ্গালি ভদ্রলোক এবং জমিদারেরা নিজ স্বার্থ রক্ষায় একটি সমিতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । রাধাকান্তদেবের সভাপতিত্বে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ২১শে মার্চ কলকাতার টাউন হলে একটি সভা বসে ।ঐ সভায় নতুন যে সংগঠনের সূত্রপাত হয় তার নাম রাখা হয় জমিদার সভা বা ল্যান্ড হোল্ডার্স সোসাইটি ।নামটি রাখেন দ্বারকানাথ ঠাকুর ।

সদস্য: এই সময় ব্রিটিশ নাগরিকেরা ভারতে জমি কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন ফলত বেশ কিছু ইউরোপীয় মানুষ এই সভাতে যোগদান করেছিলেন ।যেমন থিওডোর ডিকেন্স,জর্জ প্রিন্সেপ প্রমুখ।

অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন রাজনারায়ণ রায়,মুন্সি আমীর,টাকির জমিদার মুন্সি কালীনাথ,রামকমল সেন,তারিণীচরণ মিত্র প্রমুখ। জমিদার সভার সভাপতি ছিলেন রাধাকান্তদেব,সম্পাদক ছিলেন প্রসন্ন কুমার ঠাকুর ও ইংলিশম্যান পত্রিকার সম্পাদক উইলিয়াম হ্যারি।

চাঁদা: এই সভার সদস্য হতে প্রথমে পাঁচ টাকা ও বার্ষিক চাঁদা কুড়ি টাকা দিতে হতো নিয়মিত ।ফলত সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই সভার সদস্য হতে পারতেন না ।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠন: ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু ইউলিয়াম অ্যাডাম লন্ডনে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি গঠন করেন। জমিদার সভার সঙ্গে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল ।প্রখ্যাত বাগ্মী জর্জ টমসন ভারতের অনুকূলে ইংল্যান্ডে প্রচারকার্য চালিয়েছিলেন।অবশেষে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ল্যান্ড হোল্ডার্স সোসাইটি ও বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি একত্রিত হয়ে তৈরি হয় ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ রাধাকান্তদেব এর সভাপতি হন এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন এর সম্পাদক ।

উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য:

১।জমিদার সভার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা ।

২। ভারতীয়দের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল ইংরেজদের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ।

৩।ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে জমিদারদের স্বপক্ষে আনা ।

৪।ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা স্থাপন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে অধিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগী হওয়া ।

দাবীসমূহ:

১।ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার ঘটানো ।

২।পুলিশ,বিচার,রাজস্ব বিভাগের সংস্কার সাধন ।

৩। নিষ্কর জমির ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ।

সাফল্য:

১। শুধু বাংলায় নয় ভারতের অন্য প্রান্তে জমিদার সভার শাখা গড়ে উঠেছিল।দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেষ্টায় মাদ্রাজ ও পুনায় এই সমিতির শাখা বা কার্যালয় গড়ে উঠেছিল ।

২। জমিদার সভার আন্দোলনের ফলে প্রতি গ্রামে পঞ্চাশ বিঘা নিষ্কর ভূমি রাখার ব্যবস্থা হয়।ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে দশ বিঘার বেশি রাখতে পারত না ।

জমিদার সভার প্রশংসা করতে গিয়ে রাজেন্দ্রলাল মিত্র লিখেছেন “এই সংগঠন হলো এমন একটি সংগঠন যেটি এদেশের মানুষকে প্রথম তাদের অধিকার অর্জনে সাংবিধানিক পথে লড়তে শেখায়।নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে সরব হতে শেখায় ।এটি সত্য কথা নয় যে এ সমস্ত অধিকার বা দাবিদাওয়া শুধুমাত্র জমিদারদের স্বার্থ জড়িয়ে ছিল ।কিন্তু পরিণতিতে তাদের অধিকার বা দাবিদাওয়া সঙ্গে রায়তদের স্বার্থ জড়িত ছিল ।এক্ষেত্রে একটির সঙ্গে আরেকটি আলাদা করে দেখা যায় না”।

Please click the link below to watch video lecture.

এই বিষয়ের ওপর ভিডিও লেকচার দেখার জন্য নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ।

Last updated