ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন:-

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন:-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে শ্রমিক আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধের ফলে একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিপায়, অন্যদিকে মজুরি হ্রাস পায় ।১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ২রা অক্টোবর বোম্বাই শহরে ৯০,০০০ শ্রমিক যুদ্ধ বিরোধী ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে ।১৯৩৯খ্রিস্টাব্দে কলকাতা,জামশেদপুর,ঝরিয়া,ধানবা্‌দ,ডিগবয়, বোম্বাই,প্রভৃতি শহরে শ্রমিক কর্মচারীরা মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির দাবীতে ধর্মঘট করে। এমত অবস্থায় গান্ধিজী ১৯৪২খ্রিঃ আগস্ট মাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন । কিন্তু তার আগে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করলে এবং রাশিয়া মিত্রশক্তিতে যোগদান করে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলে বামপন্থী বা কমিউনিস্ট পার্টি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মিত্র পক্ষকে সমর্থন করে ।ফলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জনযুদ্ধে পরিণত হয় । স্বাভাবিকভাবে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে । কিন্তু গান্ধিজি গ্রেপ্তার হলে শ্রমিকরা কারো নির্দেশ ছাড়াই এক সপ্তাহ ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে ।ঐতিহাসিক জ্ঞানেন্দ্র পান্ডেরর মতে এক্ষেত্রে গান্ধিজির ‘ক্যারিশমা’ বিশেষ গুরুত্বপূর্নছিল।দিল্লী,কানপু্‌র,লক্ষ্মৌ, বম্বে,নাগপুর,জামশেদপুর, মাদ্রাজ,ব্যাঙ্গালোর, ও আমেদাবাদে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল ।

বোম্বাইঃ- ৯থেকে ১৪ই আগস্ট বোম্বাইতে গনবিক্ষোব তীব্র আকার ধারণ করেছিল।সামরিক বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।এই সংঘাতে শ্রমিক শ্রেণির সক্রিয় ভূমিকা ছিল ।

গুজরাট:-১৯৪২খ্রিস্টাব্দে ৯ই আগস্ট আমেদাবাদে ‘মজুদুর মহাজন সংঘে’র নেতৃত্বে প্রায় ১,২৫,০০০ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করে । রাজনৈতিক দাবিদাওয়ায় লক্ষ্যে তিনমাস ব্যাপী ধর্মঘট চলেছিল ।এই ধর্মঘটে শ্রমিকদের তরফে মজুরি বৃদ্ধির কোন দাবিদাওয়া ছিলনা ।

বিহার:-বিহারের জামশেদপুর মেটাল করাখানা এবং ঝরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকরা জনগণের সঙ্গে মিলিতভাবে ধর্মঘট আন্দোলনে সামিল হয় । ১০ই আগস্ট TISCO তে ধর্মঘট শুরু হয় এবং ২০ই আগস্ট আবার একটি ধর্মঘট হয় ।এই ধর্মঘটে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করে ১৯৪২খ্রিস্টাব্দের ১২ই আগস্ট ডালমিয়া নগরে ধর্মঘট হয়,যাতে বহু শ্রমিক যোগদান করে ।

মহীশূরঃ- বিভিন্ন কারখানা ও খনি শ্রমিকেরা জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে জোরদার করে তোলে । দক্ষিণ ভারতে টেনালি,রামনাদ,কোয়েম্বাটোর প্রভৃতি অঞ্চলের শ্রমিকরা সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল ।

১৯৩৯-৪০খ্রিস্টাব্দে ভারতে মোট শ্রমিক ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল ৬৬৭ সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ । ১৯৪৫-৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিয়নের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৮৭ সদস্য সংখ্যা ৮,৬৪,০ ৩০ । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ১৬২৯ টি শ্রমিক ধর্মঘট হয় ।বিশ লক্ষ শ্রমিক যোগদান করে । কলকাতার ট্রাম কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময় কালে কয়েকবার ধর্মঘটে সামিল হয় ।

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের পর অতিরিক্ত সময় কাজ বন্ধ্যের দাবি নিয়ে বোম্বাই ডক ইয়ার্ডের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে নামে।উত্তর পশ্চিম রেলওয়ে ওয়ার্কশপে সমস্ত কর্মীরা ভাতা বাড়ানোর দাবী নিয়ে ৪দিন ধর্মঘট চালায় ।

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ইন্দোনেশিয়াগামী জাহাজে মাল বোঝাই করতে অস্বীকার করে কলকাতা,বোম্বাই,বন্দরের শ্রমিকরা কারণ ঐ জাহাজে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিযুক্ত সেনাদের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছিল ।

১৯৪৬খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহের সমর্থনে বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে । বোম্বাইয়ের রাজপথে পুলিশ ও সেনাদলের সঙ্গে শ্রমিকদের খন্ডযুদ্ধ বাঁধে এতে প্রায় ২৫০জন শ্রমিক নিহত হয়

১৯৪৬ খ্রিস্টাদে জুলাই মাসে সারা ভারত ডাক ও তার বিভাগের কর্মীরা ধর্মঘট পালন করে ।

এই বিষয়টি ভালভাবে বোঝার জন্য নীচের ভিডিওটি দেখুন ।এবং আমার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ।

Last updated