আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (১৯৩০-৩৭ খ্রিস্টাব্দ)।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ১৯৩০ এর দশকে পুনরায় কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। উত্তর প্রদেশ বিহার, পাঞ্জাব, অন্ধ্র, বাংলায় কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।

এর পশ্চাতে অবশ্য কিছু কারণ ছিল –

১) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বব্যাপী মন্দা কৃষকদের জীবন বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল।

)বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সার্থকতা কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল।

৩) এই সময় ব্রিটিশ সরকার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় করের হার বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।

৪)১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্রপাত করলে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল।

৫)এই সময় শুধু কংগ্রেস নয় কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কৃষক আন্দোলনকে জোরদার করে তুলেছিল।

আমরা আমাদের আলোচনার সুবিধার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কৃষক আন্দোলন আলোচনা করব।

যুক্তপ্রদেশ : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা এবং কৃষি পণ্য মূল্যের দাম হ্রাসের ফলে যুক্ত প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি নেহেরুর নেতৃত্বে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়-১) কৃষি জমির খাজনা হ্রাস ২)কৃষকদের কৃষি ঋণ মুকুব ৩)প্রজা উচ্ছেদ বন্ধ ইত্যাদির সঙ্গে লবণ কর প্রত্যাহার কে জুড়ে দেয়া হয়।

রায়বেরেলিতে কৃষকরা খাজনা বন্ধ আন্দোলন শুরু করে। নেতৃত্ব দেন রফি আহমেদ কিদোয়াই। ক্রমে আগ্রা বাঁরাবাকি ইত্যাদি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই বিদ্রোহ।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কালিকাপ্রসাদ অঞ্জলি কুমার নামে দুই নেতার নেতৃত্বে কৃষকরা জমিদারদের গৃহ ঘেরাও করে, জমি বেদখল বন্ধের চেষ্টা করে।

বিহার : স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী বিহার একটি প্রাদেশিক কিষান সভা গঠন করেন। পরে তিনি রাহুল সাংকৃত্যায়ন, পঞ্চানন শর্মা, যদুনন্দন শর্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে কৃষকদের সঙ্ঘবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

বখস্ত আন্দোলন :

মহামন্দার সময় খাজনা দিতে না পারায় প্রজাস্বত্বভোগী কৃষকদের যে সমস্ত জমি জমিদারেরা নিয়ে নিয়েছিল সে গুলোকে ‘বখস্ত জমি’ বলা হয়। এই হারানো জমি ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে যদুনন্দন শর্মা, পঞ্চানন শর্মা, রাহুল সাংস্কৃত্যায়নের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছিল।দ্বারভাঙ্গা গয়া জেলায় বলপূর্বক বীজ বপন ও ফসল কাটা কর্মসূচির মাধ্যমে এই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল।

এছাড়া বিহারের মুঙ্গেরে ও বারহাইয়া তালুকে জমিদারি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল।

# পাঞ্জাব :পাঞ্জাবের মহারাজের অনুগত জমিদারদের নিয়ন্ত্রণে খাজনা বা বাতাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।

# আমৃতসর, হোশিয়ারপুর, জলন্ধর ইত্যাদি জেলায় আন্দোলনের তীব্রতা ছিল বেশি। এইসব অঞ্চলের শিখ ও জাঠ কৃষকরা ছিল স্বনির্ভর এবং গুরুদ্বার আন্দোলনের প্রভাবে রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন।সোহন সিংহ, হরি সিং, তেজা সিং এর উদ্যোগে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

# মন্টোগোমারি ও মুলতান জেলার কৃষকরা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল।অন্যদিকে অমৃতসর ও লাহোরে সেচ কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কৃষকরা আন্দোলন করেছিল।

উড়িষ্যা : উড়িষ্যার ঢেনকানল ও নীলগিরিতে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যায় ‘কৃষক সংঘ’ গড়ে উঠেছিল।

বাংলা : বাংলায় ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ এ কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল ইয়ং কমরেড লীগ। পাকুন্দিয়া, মির্জাপুর, জামালপুর, গোবিন্দপুরে, এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া ঢাকা, ত্রিপুরা, বগুড়া, নোয়াখালী, রংপুর জেলাতেও মহাজনদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।

বঙ্কিম মুখার্জি নেতৃত্বে বর্ধমানের কৃষকরা দামোদরের খালের বর্ধিত করে বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল।

দক্ষিণ ভারত –

অন্ধ্র : অন্ধ্রতে বালা রামকৃষ্ণের নেতৃত্বে কৃষকরা খাজনা বন্ধ আন্দোলন শুরু করে।তার তেলেগু কাব্য ‘গান্ধী গীতা’ কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছিল।নেলোরে কৃষকরা সংগঠিত হয়েছিল।কৃষ্ণা ও গুন্টুর জেলায় ব্যাপক আকারে মহাজন’ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

১৯৩৪-৩৫ খ্রিস্টাব্দে এন জি রঙ্গ এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অন্ধ্রপ্রদেশ রায়ত অ্যাসোসিয়েশন’।পরে গড়ে ওঠে ‘কৃষক ও কৃষি শ্রমিক দক্ষিণ ভারতীয় ফেডারেশন’।এন জি রঙ্গ হন এর সাধারণ সম্পাদক এবং ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ ধরনের যুগ্ম-সম্পাদক।

কেরল : কেরোলি কংগ্রেস নেতা কেলাপ্পান কিষাণ সত্যাগ্রহ সংগঠিত করেন।তিনি গ্রামে গ্রামে গড়ে তোলেন ‘কৃষক সঙ্গম’। নায়েব গোমস্তাদের অন্যায় শোষণ ও দুর্নীতি অবসান, আগাম খাজনা প্রদান রীতি বাতিলকরণ, সামন্ততান্ত্রিক করের বিলোপ সাধন ইত্যাদি ছিল তাদের অন্যতম দাবি।

Last updated