ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীদের অংশগ্রহণ ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারীদের অংশগ্রহণ ।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মহিলাদের সক্রিয় ভূমিকা বেশ জোরালোভাবে চোখে পড়ে। এই পর্বে মহিলারা দুটি ভিন্ন ধারায় আন্দোলন করেছিলেন।

১। শহরাঞ্চলে মেয়েরা ধর্মঘট, প্রতিবাদসভা, এমনকি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।

২। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে কর বৃদ্ধি, জমিদারী শোষণ, পুলিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেয়।

কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা কারারুদ্ধ হলে কিছু বিখ্যাত মহিলা নেত্রী নজিরবিহীনভাবে পুলিশি অত্যাচারের মুখে আন্দোলন সুসংবদ্ধ ভাবে পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।

ঊষা মেহতা বম্বেতে গোপন বেতার বার্তা চালু করেন যার নাম ছিল ‘ভয়েস অফ ফ্রিডম’।

কারণ ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ্যে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের অধিকার খর্ব করলে ঊষা মেহতা গোপনে বিভিন্ন আন্দোলন ও বিদ্রোহের খবর প্রচার করেছিলেন । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ১২ ই নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন।

অন্যদিকে গান্ধীজীর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে সুচেতা কৃপালনী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলাকালীন কংগ্রেসের মহিলা বিভাগের নেত্রী হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে আন্দোলনের বার্তা এবং নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেছিলেন । ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে লক্ষ্ণৌ জেলে একজন ‘dangerous prisoner' হিসেবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।

আসামের গোহপুর থানায় ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রাণ হারান কনকলতা বড়ুয়া।

পাঞ্জাবে রাজকুমারী অমৃত কাউর, অমর কাউর, পুষন গুজরাল সম্মিলিতভাবে আন্দোলন পরিচালনা করেন । এছাড়া অসম সাহসের পরিচয় দেন ভোগেশ্বরী ফুকননী ।

তমলুকে জাতীয় সরকার নারী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন যার নাম হয় ‘ভগিনী সেনা’। এই দলে ছিলেন কাদম্বিনী মাইতি, সুরাইয়া সুন্দর মাইতি, কুসুমবালা দেবী, রাধারানী পাত্র ।

মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় মূলত তমলুকে খাজানা বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে । জনসাধারণ পুলিশ চৌকি আক্রমণে উদ্যত হয় । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে সেপ্টেম্বর তমলুকের কিছু আন্দোলনকারী থানা ঘেরাও করতে অগ্রসর হয় । সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাদের বাঁধা দেয় । এই সময়ে ৭৩ বছরের বিধবা নারী মাতঙ্গিনী হাজরা এগিয়ে এসে পতাকা তুলে নেন এবং এবং জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনকারীদের এগিয়ে যেতে বলেন । পুলিশের বাধা এড়িয়ে এগোতে গেলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মাতঙ্গিনী হাজরা ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাঁকুড়ার শান্তিশীলা পালিত, ঢাকার আশালতা সেন, বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীহট্টের সরলাবালা দেবী, নোয়াখালীতে সুশীলা মিত্র, সিউড়িতে লাবণ্যপ্রভা দত্ত,কুমিল্লায় মায়া ঘোষ প্রমুখরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ।

আইন অমান্য আন্দোলন কালে দেখা গিয়েছিল পুরুষ সদস্যরা ডান্ডি পৌঁছানো পর্যন্ত মহিলাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল । ডান্ডি পৌঁছনোর পর তাদের বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে সংগ্রাম এবং প্রতিরোধ চালিয়েছে এবং একই ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন ।।

এই বিষয়ে আরো জানতে নীচের ভিডিওটি দেখুন ।

এবং চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন ।।

Last updated