রংপুর বিদ্রোহ । Rangpur Revolt
কোম্পানির ইজারাদারি শোষণের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া ছিল ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের রংপুর বিদ্রোহ।এই কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল দিনাজপুর এবং রংপুরের ইজারাদার দেবী সিংহের বিরুদ্ধে ।
দেবী সিংহ এবং তার অত্যাচার – দেবী সিংহ ছিলেন ব্যবসায়ী। ভাগ্য অন্বেষণের জন্য তিনি উত্তর ভারত থেকে মুর্শিদাবাদে আসেন ।রেজা খাঁর কৃপায় দে্বী সিংহ প্রথমে পূর্ণিয়ার ইজারা ও শাসনভার গ্রহণ করেন ।প্রজাদের ওপর তুমুল অত্যাচার শুরু করেন ।বাধ্য হয়ে হেস্টিংস দেবী সিংহকে পদচ্যুত করেন ।
এর পর দেবী সিংহ উৎকোচ প্রদান করে প্রাদেশিক রেভিনিউ বোর্ডের সহকারী কার্যাধ্যক্ষের পদ দখল করেন ।এখানেও দেবী সিংহ নামে-বেনামে বিভিন্ন জমিদারির ইজারা নেন এবং নিজের সম্পত্তি বাড়াতে থাকেন ।হেস্টিংস বাধ্য হয়ে ‘রেভিনিঊ বোর্ড’ ভেঙ্গে দেন ।
বিদ্রোহের মূল কারণ – হেস্টিংস দেবী সিংহকে দিনাজপুর এবং রংপুর প্রভৃতি স্থানের ইজারা দান করেন ।দেবী সিংহ বাৎসরিক ১৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের শর্তে ইজারা পাওয়া মাত্র উচ্চহারে রাজস্ব ধার্য করেন ।এসব জায়গায় কৃষক,তাঁতি ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের কাছে বারো মাসের পরিবর্তে সতেরো মাসের রাজস্ব আদায় করা হতো ।এমনকি ‘লাখোয়াজ’ বা নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত করা হয় ।অসহায় কৃষকরা তখন নিরুপায় হয়ে মহাজনদের দ্বারস্থ হয়েছিল ।ঋণের দায়ে শেষ পর্যন্ত ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছিলো ।
বিদ্রোহের সূত্রপাত ও বিস্তার -অবশেষে দিনাজপুর এবং রংপুরের কাজিরহাট,ফতেপুর,ডিমলা গ্রামের কৃষকরা সমবেত ভাবে সশস্ত্র অভ্যুত্থানে সামিল হন ।বিদ্রোহী কৃষকরা সমবেতভাবে নূরুলউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তাদের নেতা নির্বাচিত করেন ।নূরুলউদ্দিন ‘নবাব’ উপাধি নিয়ে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন । বিদ্রোহের খরচ চালাবার জন্য কৃষকদের ওপর ‘ডিং খরচা’ নামে চাঁদা ধার্য করেন ।
বিদ্রোহের প্রাবল্য: টেপা এবং ফতেপুরে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে । টেপার জমিদার বিদ্রোহীদের বাধা দিতে গিয়ে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন ।বিদ্রোহীদের হাতে কয়েকজন কর সংগ্রাহক নিহত
হয় ।
বিদ্রোহ দমন: দেবী সিংহ নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে রংপুরের কালেক্টর গুডল্যান্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন ।বিশাল ইংরেজ বাহিনীর সাথে মোগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা পরাজিত হয় এবং নূরুলউদ্দিন গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ।
বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল-
১।বিদ্রোহের ফলে দেবী সিংহ রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হন ।রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৩৯০২০০ টাকা রাজস্ব অনাদায় হিসেবে পড়ে থাকে ।
২।দেবী সিংহ কে তার পদ ও ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয় ।
৩।লর্ড কর্নওয়ালিস ইজারা প্রথার অবসান ঘটিয়ে দশশালা বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন ।
৪।রংপুর বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের সাহস আত্মত্যাগ পরবর্তীকালের কৃষক বিদ্রোহে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলও ।
৫।রংপুর বিদ্রোহের অন্যতম দিক ছিল হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ।নূরুলউদ্দিন সাথে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দির্জিনারায়ণ,কেনা সরকার,ইজ্রায়েল খাঁ প্রমুখরা ।
Please click the link below to watch the video lecture.
ভিডিও লেকচার দেখার জন্য নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ।
Last updated