সারা ভারত কিষান সভা।
Last updated
Last updated
সারা ভারত কিষান সভা।
১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল এবং কংগ্রেসের বামপন্থী গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে একটি সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন যার ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সারা ভারত কিষান সভা বা ‘All India Kisan Sabha’।
প্রেক্ষাপট :
১) ১৯৩২ সাল নাগাদ স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী বিহার কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন জয়প্রকাশ নারায়ণ।
২)অন্যদিকে অন্ধ্রে এন জি রঙ্গ স্থাপন করেন ‘রায়ত সভা’। ১৯৩৫ সাল নাগাদ এন জি রঙ্গ এবং ই.এম.এস. নাম্বুদিরিপাদ এর যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠে দক্ষিণ ভারত কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক ফেডারেশন। ১৯৩৫ সালে অক্টোবর মাসে ফেডারেশনের এক সভায় একটি সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
৩) এদিকে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা হলে কমিউনিস্টরা সমাজবাদী কংগ্রেস পার্টি ছত্রছায়ায় শ্রমিক এবং কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করতে উদ্যোগী হয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির মিরাট অধিবেশনে সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়া হয়।
৪) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে যখন লক্ষ্মৌ শহরের কংগ্রেসের অধিবেশন চলছিল তখন নেহেরুর সমর্থনে কংগ্রেসের বামপন্থী গোষ্ঠী কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী এবং কমিউনিস্ট একত্রিত হয়ে ‘সারা ভারত কিষান সভা কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিষান সভার প্রথম সভাপতি হন এন.জি. রঙ্গ এবং সাধারণ সম্পাদক হন বিহারের স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী।
অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ইন্দুলাল যাজ্ঞিক (গুজরাট), মোহনলাল গৌতম (যুক্তপ্রদেশ), সোহান সিং যশ (পাঞ্জাব) কমল সরকার সুধীন প্রামাণিক (বাংলা), জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া (কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট দল)।
দাবিসমূহ : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত কিষান কংগ্রেস ইশতেহারে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরে –
১) জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ২) কৃষি ঋণ মুকুব ৩) বেগার প্রথা উচ্ছেদ ৪) খাজনার হার ৫০ শতাংশ হ্রাস ৫)কৃষকদের বন সম্পদ আহরণের পূর্ণ অধিকার ৬) অনাবাদী এবং খাস জমি কৃষকদের চাষের জন্য প্রদান।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিহারের গোয়ার জেলার নিয়ামতপুরে দ্বিতীয় অধিবেশনে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ‘সারা ভারত কিষান সভা’।কিষাণ সভার অধিবেশনের জহরলাল নেহেরু, মানবেন্দ্রনাথ রায়, আচার্য নরেন্দ্র দেব, মাসানি প্রমুখ নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
কিষান সভা এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লক্ষ এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লক্ষ।
বিভিন্ন আন্দোলন :
১) অন্ধ্র ‘অন্ধ্র প্রাদেশিক কিষান সভার’ ২000 জন কৃষক ১৩০ দিন পায়ে হেঁটে ১৫০০ মাইল পথ অতিক্রম করে বহু জনসভা করে কৃষকদের সংগঠিত করেছিল।
২) বিহারী স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ১ লক্ষ কৃষাণের সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন।
৩) পাঞ্জাবে লাহোর, অমৃতসর, জলন্ধর, হোশিয়ারপুর এ কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল।
৪) বাংলায় বঙ্কিম মুখার্জি নেতৃত্বে আন্দোলনের চাপে পড়ে দামোদরের খালের জলের বর্ধিত কর একর প্রতি ৫ টাকা থেকে কমিয়ে দু টাকা ৯ আনা করতে বাধ্য হয়।